শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:০৫ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :

জঙ্গিদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরাতে ‘পথ’ তৈরি করছে র‌্যাব

তরফ নিউজ ডেস্ক: কোনো না কোনোভাবে জঙ্গিবাদে জড়িয়ে যাওয়াদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরাতে বড় উদ্যোগ নিয়েছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন-র‌্যাব। এ ব্যাপারে একটি হটলাইন চালুর পাশাপাশি জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়াদের আইনি সহায়তাও দেবে এই এলিট ফোর্সটি।

জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়েছেন এমন কেউ বা তার স্বজনরা চাইলে র‌্যাবের হটলাইনে যোগাযোগ করে সহযোগিতা নিতে পারবেন। এছাড়া জঙ্গিদের প্রয়োজনীয় আইনি সহায়তা দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফেরাতে অনুপ্রাণিত করবে র‌্যাব।

র‌্যাব বলছে, জঙ্গিবাদের মতো উগ্রপন্থাকে কেবল বন্দুক দিয়ে তথা অভিযান চালিয়ে দমন করা সম্ভব নয়। কারণ ‘জঙ্গিবাদ’ একটি মনে ঠাঁই করে নেয়া ধারণা বা বিশ্বাস। সেই ক্ষতিকর বিশ্বাস থেকে উগ্রপন্থায় জড়িয়ে পড়াদের স্বাভাবিক জীবনে নিয়ে আসতে হবে। এর জন্যই যেন ‘জঙ্গিরা’ বা তাদের স্বজনরা যোগাযোগ করে আলোর পথের সন্ধান পায় সে উদ্যোগ নিয়েছে র‌্যাব। এজন্য র‌্যাবের হটলাইন নম্বর ০১৮৪৭৪৭৪০৫০ আর rabintdir@gamil.com ইমেইল অ্যাড্রেসে যোগাযোগ করা যাবে।

দেশে জঙ্গিবাদ তথা জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে র‌্যাব সফলতা পেয়েছে। এলিট ফোর্সটির নানা সময়ের অভিযানে দেশে জঙ্গিবাদের বাড়বাড়ন্ত রূপও কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে।

তবে অভিযানের পাশাপাশি জঙ্গি সংগঠনগুলোকে আত্মসমর্পণ করার সুযোগ দিচ্ছে তারা। সম্প্রতি র‌্যাবের মাধ্যমে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে জঙ্গি সংগঠন জেএমবি, নব্য জেএমবি, আনসার আল ইসলাম ও আনসারউল্লাহ বাংলা টিমের নয়জন সদস্য আত্মসমর্পণ করেন।

এদের মধ্যে চিকিৎসক দম্পতি, প্রকৌশলী, শিক্ষার্থীসহ নানা পেশার মানুষ রয়েছেন। আত্মসমর্পণ করাদের মেধা অনুযায়ী আর্থিক সহায়তার পাশাপাশি জীবিকার চাকা সচল রাখতে চাষাবাদের জন্য ট্রাক্টর আর গরুর খামার করে দিয়েছে র‌্যাব। তাদের সন্তানদের জন্য উপহারের ব্যবস্থা করা হয়।

র‌্যাবের ভাষ্য, নয়জন জঙ্গির ডি-রেডিক্যালাইজেশন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশনের মাধ্যমে সন্ত্রাস ও চরমপন্থার জীবন পরিত্যাগ করে শান্তি ও আলোর পথে তথা সমাজের মূলধারায় নিজেদের সমর্পণ করেছেন। তাদের দেখাদেখি অনুপ্রাণিত হয়ে জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়া অন্যরাও স্বাভাবিক জীবনে ফেরার উৎসাহ পাবেন বলে মনে করছে র‌্যাব।

তবে ফৌজদারি অপরাধের সাজা নিয়ে যারা কারাগারে আছে তাদেরকে অবশ্যই কারাগার থেকে দায়মুক্ত হয়ে আসতে হবে। এক্ষেত্রে কেউ সহায়তা চাইলে র‌্যাব তাদেরকে আইনি পরামর্শ দেবে।

র‌্যাবের শীর্ষ কর্মকর্তারা বলছেন, জেল খেটে বের হওয়ার পর জঙ্গিরা পুনরায় উগ্রপন্থায় জড়িত হতে পারে। আবার জেলের ভেতরেও উগ্রপন্থা ছড়িয়ে দিতে পারে। তাই তাদের কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে উগ্রবাদী মানসিকতার পরিবর্তন ঘটাতে হবে। র‌্যাবের এই উদ্যোগের মাধ্যমে তাদের মানসিকতার পরিবর্তন ঘটাতে পারবে বলে তারা মনে করছেন।

র‌্যাবের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২০ সালে সারাদেশে জঙ্গিবিরোধী ১৯৭টি অভিযান পরিচালনা করা হয়। এসব অভিযানে ৩৫১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘জঙ্গিবাদ থেকে স্বাভাবিক জীবনে কেউ ফিরে আসতে চাইলে র‌্যাব তাদেরকে সহায়তা বা অনুপ্রাণিত করছে।’

‘যারা রাষ্ট্রদোহ বা ফৌজদারি অপরাধ করেনি তারা র‌্যাবের মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারবে। এজন্য র‌্যাব সদরদপ্তর একটি মোবাইল নম্বর ও ই-মেইল চালু করতে যাচ্ছে। তবে গুরুত্বর ফৌজদারি অপরাধে যারা জেলে আছে তাদেরকে অবশ্যই জেল থেকে দায়মুক্ত হয়ে আসতে হবে। এক্ষেত্রে কেউ সহায়তা চাইলে র‌্যাব তাদেরকে আইনি পরামর্শ দেবে’─যোগ করেন লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ।

র‌্যাব মুখপাত্র বলেন, ‘জঙ্গিবাদে বিশ্বাসী বা তার পরিবারের যে কেউ র‌্যাবকে তথ্য জানাতে পারবেন। অনেক সময় তাদের পরিবার জানতে পারে তাদের একজন সদস্য জঙ্গিবাদে জড়িয়েছে; আপনারা (র‌্যাব) সহযোগিতা করেন। এমন সহায়তা চাইলে আমরা যাচাই-বাছাই করে তাদেরকে সহযোগিতা করব।’

র‌্যাবের এই কার্যক্রমকে ভালো উদ্যোগ হিসেবে দেখতে চান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অপরাধ বিজ্ঞানী ড. জিয়া রহমান। তিনি বলেন, ‘যারা জঙ্গিবাদের মতো অপরাধে জড়িয়েছে তাদেরকে ফিরিয়ে আনতে র‌্যাবের এই ধরনের কার্যক্রম অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখে।’

ড. জিয়া বলেন, ‘র‌্যাব সুন্দরবন ও চট্টগ্রামে জলদস্যু নিয়ন্ত্রণে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে। বাহিনীটি জলদস্যুদের আত্মসমর্পণের সুযোগ দেয়ায় অনেক জলদস্যু আত্মসমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবন ফিরে পেয়েছে।’

তবে তার মতে, জঙ্গিবাদ থেকে ফিরিয়ে আনাদের অবশ্যই একটি প্যাকেজের আওতায় আনতে হবে। বিশেষ করে তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। তাহলে এই ধরনের উদ্যোগ সফল হবে।

সম্প্রতি আত্মসমর্পণ করা নয়জনের বিষয়টি টেনে এ অপরাধ বিজ্ঞানী বলেন, ‘তাদেরকে দেখলাম কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এটা অবশ্যই ভালো দিক। কারণ রাষ্ট্রের নাগরিকদের প্রতি অবশ্যই সরকারের দায়-দায়িত্ব রয়েছে।’

র‌্যাবের এ উদ্যোগের বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, ‘ইসলামে জঙ্গিবাদের কোনো স্থান নেই। যারা আসলেই ইসলামের আদর্শ লালন করে স্বাভাবিক জীবনে আসতে চায় তাদের জন্য শুধু আইনগতই নয়, পুনর্বাসনের জন্য যা যা করণীয় তার সবকিছুই করা হবে। কেননা ইতিমধ্যে অনেক জঙ্গি আত্মসমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে এসেছে। তাদের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়েছে।’

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন

ওয়েবসাইটের কোন কনটেন্ট অনুমতি ব্যতিত কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
Design & Developed BY ThemesBazar.Com